Banner Ads

চলুন জেনে নিই কীভাবে এবারের শীতের ছুটিকে আমরা প্রোডাক্টিভ করতে পারি । ISLAMIC STORY

 হাঁটি হাঁটি পা পা করে শীত তো চলেই এল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে শীতের ছুটি। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ছুটির আগে আমরা কত প্ল্যান করি—এই করব, সেই করব; কিন্তু ছুটি শুরু হয়ে গেলে কী করব খুঁজে পাই না। ঘুমে ঘুমেই চলে যায় পুরো ছুটিটা। অথচ এই সময়টাকে প্রোডাক্টিভভাবে কাটাতে পারলে কত নতুন কিছু শিখে ফেলা যেত, নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে, আরেকটু এগিয়ে নেওয়া যেত!



তাহলে চলুন জেনে নিই কীভাবে এবারের শীতের ছুটিকে আমরা প্রোডাক্টিভ করতে পারি।
১. নতুন কিছু শেখা :
সবাই বলে ছুটিতে নতুন কিছু শিখে ফেলতে। কেউ কেউ প্ল্যানও করে এই শিখব, সেই শিখব; আদতে শেখা হয়ে উঠে না। কারণ যেকোনো জিনিস শিখতে ধৈর্য আর অধ্যবসায় লাগে, শুরুতে কঠিন মনে হয়। অথচ ছুটির দিনে এত কষ্ট করতে মন চায় না। মন চায় আরাম করতে, মজা করতে। তাই এমন কিছু শেখার জন্য সিলেক্ট করুন যেটা সম্পর্কে আপনার অনেক আগ্রহ আছে আর তা যেন মজায় মজায় শিখে ফেলা যায়।
যদি আপনি প্রোগ্রামিং শিখতে চান, তাহলে গেম খেলতে খেলতে প্রোগ্রামিং শেখার বিভিন্ন অ্যাপ ঘুরে দেখতে পারেন। সাঁতার শিখতে চাইলে পর্দা মেইনটেইন করা যাবে এমন চমৎকার সুইমিংপুল বা পুকুর সিলেক্ট করুন। নিজেদের পুল বা পুকুর থাকলে তাতে কিউট কিছু ডেকোরেশন করুন দেখবেন সাঁতার শেখার আগ্রহ অনেক বেড়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
সাইকেল চালানো শিখতে পারেন, নতুন কোনো ভাষাও শিখে ফেলতে পারেন।

২. পরের সেমিস্টারের প্রস্তুতি :
প্রতি সেমিস্টারের পরীক্ষার সময় আমরা মনে মনে দুআ করি, ‘আল্লাহ! এবারের মতো পার করে দিন, পরের সেমিস্টার খুব পড়ব।’ কিন্তু সেই পরের সেমিস্টারেও অবস্থার উন্নতি হয় না। অথচ আমরা যদি সেমিস্টার শুরুর আগের সময়টায় একটু ভালোভাবে প্রস্তুতি নিই তাহলে কিন্তু অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
প্রতি কোর্সের কিছু রেফারেন্স বই থাকে। আমরা সাধারণত সবগুলো বই না কিনে দুয়েকটা বই কিনে থাকি। আবার সেই বইয়েরও পুরোটা না পড়ে শুধু প্রশ্নের উত্তরের অংশটুকু পড়ি। এটা না করে সেমিস্টার শুরুর আগের এই ছুটির সময়টাতে সব রেফারেন্স বইগুলো পড়ে নিতে পারেন। সব না পড়তে চাইলে যেগুলোর পিডিএফ পাওয়া যায়, শুধু সেগুলোও পড়তে পারেন। এতে ভালো ফল করতে বেশি পরিশ্রম করতে হবে না ইনশাআল্লাহ।

৩. তাজউইদ চেক :
আমাদের অধিকাংশই ছোটবেলায় কুরআন শেখার পর আর তাজউইদ চেক করি না। এই ছুটিতে আপনি চাইলেই তাজউইদ আরেকবার ঝালাই করে নিতে পারেন। অফলাইন ছাড়াও অনলাইনেও অনেক কোর্স আছে এই বিষয়ে। ফ্রি, পেইড দু’রকমেরই।

৪. তাহাজ্জুদের অভ্যাস :
তাহাজ্জুদের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও নৈকট্য লাভ করেন। এ নামাজ বান্দাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম করে। এ ছাড়া শত্রুর ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাহাজ্জুদের গুরুত্ব রয়েছে। আমরা অনেকেই তাহাজ্জুদের নামাজের অভ্যাস করতে চাই, কিন্তু নানা ব্যস্ততায় করা হয়ে ওঠে না। এই সময়টাকে আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহাজ্জুদের অভাস গড়ে তুলতে।

৫. নিজের একফালি বাগান :
বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে নাজেহাল আমরা সবাই। অথচ প্রায় যে কেউ চাইলেই নিজের একফালি সবজি বাগান করে খরচ বাঁচাতে পারে। গ্রামে নিজ বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করা সহজ। শহরে সে সুযোগ না থাকলেও কায়দা করে সুযোগ বের করে নেওয়া যায়। আলো-বাতাস থাকলে ছোট্ট ব্যালকনিতেই গ্রিলে ঝুলিয়ে দেওয়া যায় ছোট ছোট টব। সেইসব টবে অল্প খরচেই চাষ করা সম্ভব মরিচ, টমেটো, ধনেপাতাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি। পাশে একটা পানির বড় ড্রামে মাটি ভরে লাগিয়ে দিতে পারেন কয়েকটা আলু বা বেগুন গাছ। ব্যস! হয়ে গেল আপনার পিচ্চি সবজি বাগান!

৬. জমে থাকা কাজগুলো সেরে ফেলা :
ব্যস্ততার অজুহাতে আমাদের অনেক কাজ জমে থাকে। ছুটির দিনে তাই এই জমে থাকা কাজগুলো দ্রুত শেষ করুন এবং অতিরিক্ত কিছু কাজ শেষ করে রাখুন। যেমন পরের কয়েক সপ্তাহ ব্যবহারের পোশাকগুলো আগেই ইস্ত্রি করে রাখতে পারেন, বাসার মেঝে, গ্রিল, রান্নাঘর ডিপ ক্লিন করতে পারেন, পুরো বাসার ফার্নিচারগুলো সরিয়ে সরিয়ে একটু অন্যরকমভাবে সাজাতে পারেন।


৭. পরিবারকে সময় দেওয়া :
কাজের চাপে তো পরিবারের কাউকে সময়ই দেওয়া হয় না। কিন্তু ছুটির সময়ে অবশ্যই তাদের সময় দিন। যে কথাগুলো জমে থাকে সেগুলো শেয়ার করুন, একসঙ্গে রান্না করুন এবং অবশ্যই কাছেপিঠে কোথাও থেকে ঘুরে আসুন পরিবারকে নিয়ে। পরিবারের সদস্যদের মাঝের বন্ধনকে দৃঢ় করুন। একটু বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করুন। সবাই মিলে চড়ুইভাতি করে পছন্দের খাবার রাঁধুন বা বাইরে খান। তবে সাবধান, ফাস্টফুড বা অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে দূরে থাকাই ভালো।

৮. লেখালেখির অভ্যাস :
লেখার মান ভালো হওয়াটা অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে। সেটা আমাদের পরীক্ষার খাতায় মার্কস পাওয়ার ক্ষেত্রেই হোক আর পাঠকের মন জয় করার মধ্যেই হোক। লেখার মান ভালো করতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নিয়মিত লেখালেখির চর্চা। লেখার দক্ষতা বাড়াতে এই সময়টা কাজে লাগানো যায়। ভালো লেখকরা জেনে বা না জেনে এমন কিছু কৌশল ব্যবহার করে যা তার লেখাকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
যেমন সংক্ষিপ্ত কিন্তু গোছানো এবং সহজ বাক্য পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। লেখার মাঝে নিজেই প্রশ্ন করা এবং নিজেই উত্তর দিলে কথোপকথনের আবহ আসে এবং পাঠক নিজেকে লেখার সাথে সহজে relate করতে পারে। যেকোনো বিষয় ভালোভাবে বোঝাতে দুই-তিন লাইনের গল্প ব্যবহার করা যায়। এতে বিষয়বস্তু বুঝতে সহজ হয় এবং পাঠক একঘেয়ে বোধ করে না।
বেশি বেশি লেখালেখি করার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হচ্ছে আমরা নিজেই বুঝতে পারবো কোথায় কোথায় ভুল হচ্ছে। ফলে লেখার ভুলগুলো খুব সহজেই শুধরে নিতে পারবো। এছাড়াও লেখালেখির চর্চা বেশি বেশি করলে কল্পনার জোর বাড়বে ইন শা আল্লাহ। ফলে গল্প বা কবিতা লেখার প্লট পাওয়া সহজ হবে।

৯. ঘুরে আসা যাক :
প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যান। কাজের সময় কংক্রিটের দেয়াল, চেয়ার-টেবিলেই আমাদের চোখ ও মস্তিষ্ক আটকে থাকে । ছুটির দিনগুলোতে এসব থেকে নিজেদের রেহাই দিন। নিজেকে পুনরায় সতেজ করতে প্রকৃতিতে নিজেকে মেলে ধরুন।
পার্ক, বন, সমুদ্র হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ স্থান। ছুটির দিনগুলোতে এসব স্থানে ঘুরতে যান। মানসিক চাপ কমাতে ও সুস্থতা বজায় রাখতে এর থেকে ভালো উপায় আর হতে পারে না।

১০. রান্নাবান্না শেখা :
দু’দিন বাসায় কাজের বুয়া না এলেই ব্যাচেলরদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। টুকটাক রান্না জানা থাকলে এই সময়গুলো চালিয়ে নেওয়া যায় ভালোভাবেই। হলের বিস্বাদ খাবার আগুনের দামে খাওয়ার চেয়ে নিজেই নিজের খাবার রান্না করে নেওয়া যায় রান্না জানা থাকলে। পরিবারের মানুষদের নিজ হাতে রেঁধে খাওয়ালে যে তৃপ্তিটা পাবেন, ফাইভ স্টার হোটেল থেকে হাজার টাকার খাবার অর্ডার করে খাওয়ালেও সেই তৃপ্তিটা পাবেন না। তাই প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্ক আরেকটু দৃঢ় করতে শিখে ফেলুন তাদের পছন্দের খাবার তৈরি করা। মা-চাচিদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ তো আছেই, পাশাপাশি আছে ইউটিউবের মতো সবজান্তা সমীপেষুও!

১১. পছন্দের স্কিলের হরেক কোর্স :
এই প্রতিযোগিতামূলক জীবনে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা পার্সোনাল হোক বা প্রফেশনাল, নিত্যনতুন স্কিলে নিজেকে আপগ্রেড না করলে অনেক জায়গা থেকেই ছিটকে পড়তে হয়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদেরকে শিখতে হয় নিত্যনতুন স্কিল। তাই নিজেকে আরো দক্ষ করতে কিংবা কর্মক্ষেত্রে নিজের বেতন বৃদ্ধি করতে চাইলে এই সময়ে নতুন স্কিল শিখে নিতে পারেন। প্রোগ্রামিং ভাষা, মাইক্রোসফট এক্সেল, গুগল শিট, SQL, Tableau, ইত্যাদির পাশাপাশি নেতৃত্ব, যোগাযোগ, পরিকল্পনা, স্থিতিস্থাপকতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন এই দক্ষতাগুলো আজীবন কাজে লাগাতে পারবেন।

১২. স্বেচ্ছাসেবার দায়িত্ব পালন :
যখনই অবসর পান, সমাজের কাজে লেগে যেতে পারেন। আপনার জ্ঞান আর দক্ষতাগুলো মানবসেবায় নিয়োজিত করতে পারেন। জ্ঞান আর দক্ষতা যত বেশি ছড়িয়ে দেয়া যায়, তত বাড়ে। এই স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত হয়ে অনেক কিছু যেমন শিখতে এবং জানতে পারবেন, মানসিক তৃপ্তিটাও পাবেন অনেক। সময় করে একদিন বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে যেতে পারেন রাস্তার পাশের পথশিশুদের জন্য। গ্রামের বাড়িতে চালু করতে পারেন বয়স্কদের জন্য নৈশ মাদরাসা।

১৩. বই বই বই :
এটাই পড়ার সেরা সময়। আপনার যে ধরনের বই ভালো লাগবে, ঠিক সেগুলোই পড়ে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনার রয়েছে বাঁধভাঙা স্বাধীনতা। চাইলে প্রিয় লেখকের বা পছন্দের সিরিজের সব বই সাবাড় করে দিতে পারেন এই দুই মাসেই। আজকাল অনেক ওয়েবসাইটে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে বইয়ের ডিজিটাল ভার্সন বা অডিও ভার্সন পাওয়া যায়। সেগুলোও দেখতে পারেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বা আশপাশের কোনো বইয়ের লাইব্রেরির সদস্যও হয়ে যেতে পারেন এ সময়!
ছুটি মানেই শুধু খাওয়া আর ঘুম নয়, চলুন এবারের ছুটিটাকে প্রোডাক্টিভ করে তুলি উপরের পয়েন্টগুলো ফলো করে।
______________
শীতের ছুটিতে
হাবিবুন নাহার মিমি

READ MORE:

Post a Comment

0 Comments