ইদানীং একটা লেজকাটা শেয়ালকে নিয়ে কথা হচ্ছে না, যে ছেলেটা দাবি করছে সে মানসিকভাবে মেয়ে? বাই দ্য ওয়ে, ছেলেটার কথা/নাম মুখেও আনতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু নিউজগুলো চোখের সামনে খুব আসছিল। এলার্মিং শুধু না, গা গুলিয়ে আসার মতো লাগে আমার কাছে। কিন্তু মাথায় একটার পর একটা প্রশ্ন খেলা করছে। আপনাদের কাছে শেয়ার করি। আপনাদের মতামতও আশা করছি।
একটা সময় এবং এখন পর্যন্তও অনেক মেয়ের কিন্তু পুরুষালি আচরণ দেখাতে/করতে ভাল লাগে। পুরুষের মত সাহস, দায়িত্বশীলতা, ভারী জিনিস বইবার ক্ষমতা, টাকা উপার্জন, প্যান্ট-শার্টের মত পুরুষালি কাপড়, বিড়ি ফোঁকা ইত্যাদি আচরণ করে আমাদের অনেক বোন নিজেকে ‘প্রমাণ’ করতে চান। I am someone প্রমাণ করতে যেন পুরুষ হতে হয়! নারী ব্যাপারটা অক্ষম, অসম্পূর্ণ সেই বোনদের কাছে।
এই গত পরশুও এক মেয়েকে দেখেছিলাম জিন্স আর শার্টে, হাতে দু’পাশে দু’খানা করে ভারী ব্যাগ—বাজারের। সে এমনভাবে নিজেকে জাহির করছে সে রেসপন্সিবল, ক্যান ক্যারি হারসেল্ফ!
এই জায়গায় সে নিজেকে রাণীর মত ভাবতে পারত! তার আশেপাশে তাকে সুরক্ষা দেয়ার মত লোক থাকত, বাজার করার তো প্রশ্নই আসে না!
কিন্তু ওই যে পুরুষালি ভাবসাবে নিজেকে জাহির না করে সে জাতে উঠতে পারবে না!
এখন কথা হলো, এই যে পরিস্থিতি, এখন তার উল্টাটা হবার কারণ কী?
পুরুষই উল্টো নারী, বা নারীও না, পুরুষও না, অদ্ভুত কিছু হতে চাইছে!
১. বিকৃত হতে হতে চুড়ান্ত বিকৃত রুচির দিকে মানুষ ঝুঁকে যায়! ফ্যাশন ট্রাই করতে করতে যেমন মেট গালা টাইপ অনুষ্ঠানে একদম চরম বিকৃত রুপে নিজেকে উপস্থাপন করতে চায়, সেরকম?
২. শেষমেশ লূতের কওমের মতো সমক|মিতার ব্যাপক প্রসার। খুব ভয়াবহ লাগছিল এটা ভাবতে যে ট্রান্স বলছে নিজেকে, আদতে সে তো পুরুষ! সে আবার তার পুরুষ সঙ্গী খুঁজে নেবে অবশ্যই এবং শেষ পর্যন্ত সমক|মী, আস্তাগফিরুল্লাহ! ভাবতেই পাচ্ছি না লূত আলাইহিস সালাম এই পরিস্থিতির মোকাবেলা কীভাবে করেছেন, তাঁরা তো কত পবিত্র ছিলেন! উনাদের কত কষ্ট হতো…।
৩. এখনকার সমাজে পুরুষদের বঞ্চিত (গতানুগতিক নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া) করা হোক বা ঘরে ঘরে পুরুষের কমজোর আচরণই হোক—আল্টিমেটলি কি নারী চরিত্র প্রকাশিত হচ্ছে? যেমনটা এতদিন নারীরা ছিল?
ঘরে ঘরে অসংখ্য বোনদের স্বামীদের কথা জানি, প্রতিনিয়ত এই গল্পগুলো আমাকে কষ্ট দেয়। সর্বোপরি সারমর্মগুলো এমন—
- এখনকার পুরুষরা ঝুঁকি নিতে আগ্রহী না;
- পুরুষরা দায়িত্বশীল না;
- পুরুষরা বিবেচক না;
- সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না;
- সাহসী না;
- পরিবারকে বোঝা মনে করে, ছন্নছাড়া জীবনে সুখ খোঁজে;
- পরিবার ব্যবস্থাপনা জানে না;
- যখন-তখন পরিবার থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়;
- সংসারী ব্যাপারটা ভাল লাগে না/লাগাতেও চায় না;
- প্যারেন্টিংয়ে জিরো ইন্টারেস্ট;
- কায়িক শ্রমে অনীহা;
- পরিশ্রম করতে গেলেই প্যারা খায়।
অন্যদিকে নারী হয়ে উঠেছে—
- ঝুঁকি গ্রহণকারী;
- সাহসী;
- পরিশ্রমী;
- সংসার বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যমী;
- যত্ন-আত্তি ভালো নিতে জানা;
- খেটে খেয়ে হলেও বাঁচার হিম্মত, সুন্দর করে বাঁচার চেষ্টায় হার না মানা;
- স্যাক্রিফাইসিং মানসিকতার!
অর্থাৎ শেষমেশ সামাজিক ও পারিবারিক দিক দিয়ে নারীকেই লিড করতে হচ্ছে বিধায় উঠতি তরুণ/ছেলে বাচ্চারা কি নারী হতে চাইছে? তাদের পাশে একজন নড়বড়ে পুরুষ চরিত্র দেখছে বলে কি চপল নারী হতে চাচ্ছে?
আমাদের পরিবারের কর্তাদের কি নিজেদের দিকে তাকানোর সময় হয়ে এসেছে?
আর আমরা মায়েরা নিজেদের দিকেও কি তাকাব না? আমি আমার সন্তানকে কি বেশি বগলদাবা করে নারী বানিয়ে ফেলছি? নারীসুলভ চপল কথায় তাকে অভ্যস্ত করে ফেলছি?
পুরুষকে পুরুষ এবং নারীকে নারী করে গড়ে তোলা শেখাই হয়তো এ যুগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে এখন।
________________
দিল আফরোজ শোভা
0 Comments